তর্জনী ইশারায় বাংলাদেশ

তর্জনী ইশারায় বাংলাদেশ
গোলাম রববানী 
তুমি কি ভেবেছ কভু
দু ঠোঁটের মাঝে আছে কত দরিয়ার কালো দিগন্ত আছে আরে জেঁকে বসা জাড়ের কুয়াশা
তুমি কী দেখনি কভু জীবনের এলেমেলো মেঘ বরষা
তারে আশেপাশে হাসে পূর্ব দিগন্তে সোনালি ঊষা 
সোনার বাংলাদেশ আমার সোনার বাংলাদেশ
এখানে নয়তো শেষ অবশেষে পথ চলা আগুসারে
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ 
সোনার বাংলাদেশ আমার রূপের নেইকো শেষ
তুমি  কি বুঝনি প্রভু
না কি দেখনি কো কভু এক তর্জনী ইশারায় নাচে
নেচে গেয়ে খেলে সোনার মানুষ সোনার বাংলাদেশে
দেছে জয় বাংলা স্বাধীন বাংলা স্বাধীন বাংলাদেশ
এক আঙুল ইশারায় হয়েছে রক্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা 
ওতো কিছু নয় সেতো বেশি কিছু নয়; 
ঢের বেশি হয়েছে রক্ত সমান সপ্তপারাবার!
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ
সোনার বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে বিশ্ব কাতার শীর্ষে
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ 
সোনার বাংলাদেশ আমার রূপের নেইকো শেষ!
সোনালি রূপালি বাংলার মাঠে ঘাটে আলি ফালে
ছড়ানো ছিটানো এক বিশাল রক্তিম অভয়ারণ্য;
তরুছায়ামসীমাখা গ্রামখানি সপ্তসাগর রক্ত বিনিময়ে আনা, সাক্ষী কালের তারা সাক্ষী কর্ণফুলী পানি
দুধ শিশু থেকে দাড়া দন্তহীন দিদিমাও যাইনি থেমে
গোসে গেছে আনতে ছিনিয়ে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ 
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ 
সোনার বাংলাদেশ আমার রূপের নেইকো শেষ
তর্জনী শব্দটিকে ক্রমে ক্রমে কথনে আনি টেনে
জানি না কেন তা  নড়ে চড়ে আসে বাচনভঙ্গিতে
হয়তো একটি আঙুল মাঝে রয়েছে একটি আকাশ
হয়তোবা লুকানো কোটি কোটি প্রেমিক-প্রেমিকা
হয়তো বা তারও বেশি বেশি মুক্ত স্বাধীন পাখি 
একটি আঙুল মাঝে উড়ন্ত বিশ্বে লাল সবুজ কেতন
অথবা লুকানো আছে চতুর্দশ লুই থেকে উইলিবান্ট
কিংবা উৎসুক মুক্তি ফুকিউরা; বলে! বলে যে-
তুমি কী বাংলার লোক! মৃদু হাসি বলি তর্জনী আমি
আমি তো ফুটন্ত জীবন্ত এক লাল গোলাপ 
আর জলন্ত টগবগে বলিষ্ঠ এক সূর্যসন্তান!
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ
তর্জনীতে তেরোশত নদী আনন্দ জোয়ার ভাসে।
সুর তুলে গাই গান বাংলার গান
বাউল আব্দুল করিম,হাসন, লালন
সাথে সুরের পাখি আব্বাসউদ্দীন
আরও গাই গান বিশ্বদরবারে কবি রবীন্দ্রনাথ-
অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল ভেঙে বিদ্রোহের বেশে
হেসে ভগবান বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে আসে
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম -
বল বীর- বল উন্নত মম শির!
তর্জনী ইশারার হুঙ্কার সে তো চির দুরন্ত দুর্মর 
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ 
সোনার বাংলাদেশ আমার জীবন মরণ বাংলাদেশ
তর্জনী শব্দটি সমস্ত ভাবনায় আমাকেই ছোঁই
আমার সমস্ত বোধ স্বতঃস্ফূর্তে স্পর্শ করে যাই
যেমনি  ছুঁয়ে গেছে নির্মলেন্দু গুণের-
'স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো'?
তর্জনী শব্দটি এক মুচকি হাসি হেসে রাশি রাশি 
বলে গেছে বলিষ্ঠ কণ্ঠে দাবায়ে রাখতে পারবা না!
বলে গেছে আজ থেকে স্বাধীন স্বাধীন এ বাংলাদেশ 
হোক সে জনসমুদ্র কিংবা গণসূর্য আলো
মঞ্চকাঁপানো ইতিহাস সাক্ষী রেসকোর্স 
কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
উষ্ণ তর্জনীর ইশারায় আজ স্বাধীন বাংলাদেশ 
আরও ছুঁয়ে গেছে জসীমউদ্দিনের ভাটিয়ালি গান
আরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বাংলার প্রকৃতি-
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
তুমি কি তাকিয়ে দেখেছ তোমার হাতের আঙুল?
যার ভেতর দেখেছি বৃহৎ ব-দ্বীপ অঞ্চল
চার চারটি আঙুলের ওপর বুড়ো আঙুল 
চির উন্নত শির করে দাঁড়ায়েছে ধারাল তর্জনী ফাল
যার ফলা এখন আগামীর দিকে ফলিয়ে চলেছে
সোনালি রূপালি আর জাজীর স্রোতধারায়!
যার ভেতর দেখেছি লুকানো প্রকৃতি অভয়ারণ্য 
সমস্ত বিশ্বব্যাপী সাধারণ কক্সবাজার সি বীচ
আর বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে গড়ে ওঠা সুন্দরবন! 
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ 
তর্জনী শুধু এক আঙুল নয়
তর্জনী শুধু কোনও মিথ্যে কিছু নয়
দেখো লুকিয়ে আছে  রক্তের পাহাড়  গিরি ঢিবি
দেখো লুকিয়ে আছে রক্তজমাট সাগর
তর্জনী শব্দটি কেবল একটি শব্দ নয়
তর্জনী শব্দটি মাঝে আমি পৃথিবীর পৃথিবীকে দেখি!
আরও যে রাতের পূণ্য লগন, 
আরও নীল নবঘন নীলাকাশ দেখি!
তর্জনী শব্দটিকে আমি বড় বেশি ভালোবাসি 
আছে লুকিয়ে তর্জনী মাঝে এক শান্তিসংঘে
বিশ্ব দুয়ারে উড়ছে লাল সবুজ পতাকা জাতিসংঘে
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ 
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ
সোনার বাংলাদেশ রূপের নেইকো শেষ
সেই থেকে আমি তর্জনী শব্দটিকে বেশি ভালোবাসি
তর্জনীতে ছিলো না হিংসা প্রতিহিংসা 
রাজনীতি, দল-বে দল, ধর্ম, অধর্ম 
কোনো চোখ রাঙানো মতন কোনো নীলনকশা 
ছিলো ছিনিয়ে আনতে হবে স্বাধীন বাংলা
স্বাধীন বাংলাদেশ 
তর্জনী আঙুলের মাঝে ছেলে-বুড়োর খেলাঘর
তার-ই মাঝে শাহজালাল শাহপরানের  পুণ্যভূমি 
হোক আকাশের মতন মুক্ত
পাখিগুলো সমকালে না হয় মেলুক ডানা 
মুক্ত আকাশ হোক না তার ওড়ানোর প্রিয় জন্মভূমি 
শোনো, তর্জনীর ইশারা সেতো বড় কিছু নয়, 
সব ইশারার বড় ইশারা সেতো ঐ বিধাতায়!
১০ শ্রাবণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ/ কেশবপুর, যশোর