ধূসর চিঠি

ধূসর চিঠি

শ্যামল ব্যানার্জী 

সেই কবেকার চিঠি, 

প'ড়ে আছে ফাইল বন্দী হয়ে

কত যুগ ধরে জানিনা তা,

বিবর্ণতায় হারিয়েছে রঙ

সে বোবা কান্নার চিঠি আজ,

হয়েছে ধূসর বয়সের ভারে,

তবু কেন, মেদুর স্মৃতিরা সব

আসে ফিরে ভীড় করে।

সেদিন চিঠির বয়ানে লেখা

শুধু দুটি কথা, ভালোবাসি-

আজও মন খারাপ করা কোনো এক রাতে,

রাত জাগা পাখি হঠাৎই ডেকে যায়,

এ বিষন্ন মন খুঁজে ফেরে এক

ভুলে যাওয়া মুখ সন্ধ্যা তারায়।

সে তো ছিলোনা কোনো এক ছোটো চিঠি 

ছিলো আবেগ তাড়িত এক সমুদ্র ভালোবাসা, 

সন্ধ্যার স্থির ধ্রুব তারা যেন

তোমার চোখের ভীরু নম্রতায়,

জানতে পারোনি কোনোদিন, কারণ,

সে চিঠি দেওয়া আজও হয়নি তোমায়।

পার করে আসা কত বছরের টুকরো কথা

আজও যেন খুলে দেয়,

মনের জানলা অবসর ক্ষণে,

মনে প'ড়ে যায় সে চিঠির কথা

দিন সরণির পথ বাহিকায়

স্মৃতির তরণী বয়ে আনে।

ধূসর চোখের তারায় আবছা তোমাকে খোঁজা 

হয়নি তো কোনোদিন কোনো কথা,

হয়নি সে ভাবে ঘনিষ্ঠ পরিচয়,

হয়নি আমাদের দুজনার দুজনকে ছুঁয়ে দেখা,

কথা বলা,

তবু কে জানে কি ভাবে থেকে যাও,

এ হৃদয় যেন তোমারই কথা বলে,

আমার কথা নয়।।

সে দিন মেঘ মন্দ্রিত দিনে

তোমার অজানা ছিলো সে কথা,

তুমি জানতে পারোনি, আমার না বলা 

কথার ব্যাথা।

তুমি দাঁড়িয়েছিলে ব্যালকনির রেলিঙটা ধরে,

অন্যমনস্ক কিছুটা বা উদাসীন, 

পরনে শিফনের সাদা শাড়ি, সাদা ব্লাউজ,

কপালেও সাদা টিপ

,হাতের চুড়িও বা ছিলো বুঝি সাদা, 

বাইরে বৃষ্টি প'ড়ছে তখন সারাদিন টিপটিপ।

তোমার সে দিনের চোখ শূণ্যতায় ছিলো ভরা,

কি যেন ভাবছিলে একা রেলিঙের ধারে,

তখনই ছুঁয়ে বলতে চেয়েছি তোমায়,

ভাবছো কি আমারই কথা আনমনে?

পারিনি বলতে সে কথা, হাজার দ্বিধা দিয়েছে বাধা,

কি করে বলবো বলোতো তোমায় ভালোবাসি। 

যদি ফিরিয়ে দাও নীরব অহংকারে, যদি বলো,

তুমি আমার সে নও, ঠোঁটে নিয়ে মৃদু হাসি।

তবুও সেদিনই গ্রহণ লেগেছিলো 

আমার এ সর্বনাশা মনে, 

অজগর সাপ যেন, সম্মোহিত ভালোবাসা 

আমায় ফেলেছিলো গিলে,

বুঝতে পারোনি তুমি

তোমার এ হিম শীতল মনে।

সে দিনের সেই চিঠি আজ বন্দী নীরব ভাষায় 

আজ তার আর নেই কোনো দাম,

শুধু একবার জানতে চায় তোমার কাছে,

আজও কি তোমার মনে আছে,

সেই অল্প কথা বলা ছেলেটার নাম।