প্রেমপত্র এবং .. ( ছোট গল্প )

প্রেমপত্র এবং .. ( ছোট গল্প )

শামসুন ফৌজিয়া 

টক টক টক শব্দ দরজায় ! তখন বিকেল চারটে বাজে। খোশনদীর ছোট ভাই শমিত দরজা খুলে দেখল পুলিশ ! সে অবাক হয়ে জিগ্যেস করল কাকে চাই ?
খোশনদী তোমার কে হন ? 
আমার বোন … শমিতের গলা কেঁপে উঠল ! চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে ! পুলিশ বলে উঠল , খোশনদীকে ডাকুন !
শমিত এক দৌড়ে ভেতরে গিয়ে ওর বাবাকে পেল ! হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ,বাবা পুলিশ এসেছে ! 
শমিতের বাবা রায়হান বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে পত্রিকা পড়ছিলেন ! পুলিশ এসেছে শুনে তড়াক করে উঠে বসে জিগ্যেস করলেন , পুলিশ !! পুলিশ কেন আসবে ? 
রায়হান সাহেব এগিয়ে গেলেন লিভিং রুমের দিকে ! হ্যাঁ সত্যি তো দরজার বাইরে দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে !
তিনি বললেন , কি চান ? 
প্রথম পুলিশের নাম হাসান , সে বলল, খোশনদী কি আপনার মেয়ে ? 
হ্যাঁ ! কি ব্যাপার ? আমার মেয়েকে খুঁজছেন কেন ? 
পুলিশ হাসান বলল, উনাকে ডাকুন , একটা জ্বরুরী কথা আছে !! 
রায়হান সাহেব রেগে যাচ্ছেন ! কি ব্যাপার ! আমাকে বলা যাবেনা কেন ? আমি খোশনদীর বাবা ।
ততক্ষণে শমিত খোশনদীকে ডেকে এনেছে ! সে দেখল দুজন অপরিচিত পুলিশ দাঁড়িয়ে ! 
খোশনদী জিগ্যেস করল , কি চান আপনারা ? আমি খোশনদী ! 
দ্বিতীয় পুলিশ তৌফিক বলল, আপনার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই  বলে রায়হান সাহেবকে অনুরোধ করল ! 
কি মনে করে রাগী রায়হান সাহেব শমিতকে ডেকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন । ইতিমধ্যেই পুলিশ এসেছে শুনে বাড়ির আশপাশের সকল লোক গেটের পাশে উঁকি দিয়ে দেখতে শুরু করে দিয়েছে। 
বাবা চলে যেতেই খোশনদী বলল, আমি বুঝতে পারছিনা আপনারা আমার সাথে  একা কি বলতে চান ? 
পুলিশ হাসান বলল, ম্যাডাম  কি কলেজে পড়েন ? 
খোশনদী রেগে গিয়ে বলল , হ্যাঁ বিএ ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ি ! নিশ্চয়ই এটা জানার জন্য আসেন নি?
পুলিশ তৌফিক বলল ,নিখিলকে চিনেন ? 
চমকে গেল খোশনদী !! বলল , হ্যাঁ চিনি ! 
তৌফিক বলল,কতদিন থেকে চিনেন ? 
নিখিল আমাদের কলেজের মেধাবী ছাত্র । এক ইয়ার আগে পড়ে। 
তৌফিক বলল, পাশের গলির শেষ মাথায় ওর বাড়ি ! রাজনীতি করে তাইনা ? 
খোশনদী সিরিয়াস হয়ে বলল, তা করে সবাই জানে ! কিন্তু এসব আমাকে কেন বলছেন ? 
আপনার সাথে তার যোগাযোগ হয় ?
গত চারমাস ধরে কোন যোগাযোগ হচ্ছেনা। কলেজ ও বন্ধ আর আমাদের মাঝে যতটুকু যোগাযোগ হত তা চিঠির মাধ্যমে।আমাদের বাসায় ফোন নেই ।

খোশনদী আপনাকে আমরা খুঁজছি ! হাসান ও তৌফিক কিছু চিঠি মেলে ধরল খোশনদীর সামনে ! খোশনদীর চোখ কপালে উঠল! চিৎকার করে বলল, এ কি!! আমার চিঠিগুলো আপনারা কিভাবে পেলেন ? 
তাহলে নিখিলের হাতে চিঠি পৌছায়নি? 
আপনারা প্লীজ চলে যান ! আমার বাবা শুনলে রেগে যাবেন । 
তৌফিক বলল , ঠিক আছে আপনার সাথে কথা আছে !কালকে মেইন রোডে মাহি শপিংমলের পাশে যে ট্রাফিক ছাউনি ওখানে আমার ডিউটি , আপনি যাবেন সকালে তখন কথা বলে নেব। 
খোশনদীকে রায়হান সাহেব জেরা করছেন কেন পুলিশ আসবে এত বড় একটি মেয়ের কাছে ? পাড়ার লোকেরা কি বলবে ভেবে খোশনদীর বাবা মা তাকে বকাঝকা শুরু করে দিলেন। 
মজার ব্যাপার ! পুলিশ আসার খবর পেয়ে বাসার কাজের বুয়া লিটনের মা উধাও! আর খোশনদী পুলিশের হাতে নিখিলকে লিখা চিঠিগুলো দেখে লিটনের মায়ের কথা মনে পড়ছিল। সারা বাড়ি খুঁজে ও লিটনের মাকে পাওয়া গেলনা। সারারাত চিন্তায় ছটফট করতে করতে সকালে বান্ধবী রুনার সাথে দেখা করবে বলে খোশনদী বাসা থেকে বের হল । রুনাকে পুরো ঘঠনা খুলে বলল এবং তারা দুজনে শপিংমলের পাশে অপেক্ষা করতে লাগল। 
ট্রাফিক পুলিশ তৌফিক ডিউটির ফাঁকে এগিয়ে এসে চিঠিগুলো খোশনদীর হাতে দিল। বলল, আপনার অনুমতি না নিয়ে চিঠিগুলো পড়েছি বলে দুঃখিত ! আমরা ও নিখিলকে খুঁজছিলাম ! ওর ঠিকানা খুঁজে বের করতে সময় লাগলে ও ওঁকে পাওয়া যায়নি । মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেছে তাই নিখিল পলাতক। 
খোশনদী জিগ্যেস করল , এই চিঠিগুলো কিভাবে পেলেন ? 
তৌফিক বলল, আপনাদের বাসার কাজের বুয়াকে দিয়ে চিঠি পাঠাতেন তাই না ?
খোশনদী অবাক হয়ে বলল , হ্যাঁ , লিটনের মা নিখিল ও আমার চিঠি আনা নেওয়া করত। 
তৌফিক হেসে বলল, ম্যাডাম এখানেই সব গন্ডগোল বেঁধেছে! লিটনের মা চিঠি আদান প্রদান করতে গিয়ে মনে করল কি  লেখা আছে ভেতরে তা জানবে । তাই একদিন সে আমার কাছে এসে অনুনয় করতে লাগল , পুলিশ ভাই আমার একটা উপকার করে দিবেন ? আমি অশিক্ষিত মানুষ আমার চিঠিটা পড়ে দিন । এটা শুনে মনে করলাম উনার জ্বরুরী চিঠি হবে তাই পড়তে গিয়ে দেখি এটা ত নিখিলকে উদ্যেশ্য করে নদীর লেখা প্রেমপত্র । আমি বুঝালাম উনাকে উনি বুঝতে পেরে হাসলেন , চলে গেলেন নিখিলের খোঁজে। না পেয়ে চিঠিগুলো আমার হাতে দিয়ে যান প্রতিবারই। আমি বুঝাতে পারিনি উনাকে এটা আপনার কাছেই ফেরত দেওয়া উচিত। এ পর্যন্ত আপনার চারটি চিঠি আমার হাতে জমা , এদিকে আমার ডিউটি পরিবর্তন হবে সামনের সপ্তাহে । তাই নিখিলকে খুঁজে না পেয়ে ভাবলাম বরং আপনার হাতেই আপনার চিঠিগুলো দিয়ে যাই। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আপনি এই ঘঠনার কিছুই জানেন না। এদিকে নিখিলকে খুঁজতে গিয়ে দেখি সে ও ফাঁকি দিয়ে চম্পট। তবে নিখিল খুব মেধাবী ও ভালো ছেলে এই তথ্য পেয়েছি। ভালো থাকবেন ম্যাডাম । 
খোশনদী ট্রাফিক পুলিশ তৌফিককে ধন্যবাদ জানিয়ে রাগে দুঃখে বাসায় ফিরে লিটনের মায়ের খোঁজ করল! কিন্তু লিটনের মা নেই !! বোকা লিটনের মা কি কাণ্ডটাই করল !! 
রাতের বেলা খুঁট শব্দে জেগে দেখে লিটনের মা খোশনদীর দু’পা ধরে কাঁদছে ! আপা গো আমারে মাফ করে দেন। আমি না বুঝে এসব করেছি। খুব ইচ্ছা হল কাগজের ভেতরে কি লেখা তা জানতে ! পড়তে ত পারিনা তাই ঐ পুলিশ ভাইকে দিয়েছিলাম গো আপা !
খোশনদী লিটনের মাকে বলল, তুমি যদি একবার আমাকে বলতে আমি বলে দিতাম কি লেখা বা কেন লিখি ! যাও এবার ঘুমোও গিয়ে । 

Shamsun Fouzia 
30/7/2021
New York,USA