ফিলিস্তিনে বেড়েই চলেছে হতাহতের সংখ্যা: বিশ্বব্যাপী হরতাল ও বিক্ষোভে ব্যাপক অংশগ্রহণের আহ্বান হামাসের

বাংলাভাষী ডেস্ক
ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরে ক্ষণে ক্ষণে বেড়েই চলেছে শহীদ ও আহত ব্যক্তির সংখ্যা, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। এমনকি সাংবাদিক ও মেডিকেল স্টাফদের উপরও নির্বিচারে হামলা চালানো হচ্ছে। এছাড়া মুহুর্মুহু বোমা হামলা তো চলছেই একের পর এক। বোমা হামলায় মানুষ উড়ে যাচ্ছে আকাশে, ছিটকে পড়ছে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দুপুরের খবরে আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে ২৬ জন শহীদ এবং ১১৩ জন আহত ব্যক্তি পৌঁছেছেন।
আল-জাজিরার সূত্রে আরও জানা গেছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
• ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ থেকে গাজা উপত্যকায় শহীদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৩৫ জনে এবং আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,২৯৭ জনে।
• ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় সন্ত্রাসী ইসরায়েলের গণহত্যার যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ৫০,৬৯৫ জন এবং আহত হয়েছেন ১,১৫,৩৩৮ জন ফিলিস্তিনি।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,
• ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজা উপত্যকায় পোলিও ভ্যাকসিন প্রবেশে বাধা দেওয়াটা একটি টাইম বোমার মতো, যা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার হুমকি তৈরি করছে।
• ভ্যাকসিন প্রবেশে বাধা দেওয়া ইসরায়েলের একটি প্রচ্ছন্ন প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে গাজার শিশুদের টার্গেট করা হচ্ছে। যদি ভ্যাকসিন পাওয়া না যায়, তাহলে ৬০২,০০০ শিশু স্থায়ী পক্ষাঘাত এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
আল-আরাবি টিভি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গাজা সিটির পূর্বে আল-তুফাহ এলাকার আল-নাখিল রাস্তায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর দখলদার ইসরায়েলের গোলাবর্ষণে শিশুসহ ৭ জন শহীদ।
মধ্য গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ এলাকায় “আবু ইসা” পরিবারের বাড়িতে দখলদারদের বোমা হামলায় শহীদ হওয়া এক শিশুর লাশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে শিশুটির শরীর থেকে মাথা পুরোপুরি আলাদা হয়ে গেছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দখলদারদের হামলার সময় গাজা উপত্যকায় ২৭৪ শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং শহীদ হয়েছে।
মধ্য গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহের “আবু ইসা” পরিবারের বাড়িতে দখলদার ইসরায়েলি হামলায় ৫ জন শহীদ হয়েছেন।
এদিকে গাজা উপত্যকায় শহীদ হওয়া ১৫ জন মেডিকেল স্টাফের শেষ মুহূর্তের একটি ভিডিও প্রকাশের পর ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি ‘স্বাধীন ও জরুরি’ আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী রেডিওর সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় হারেদি (অল্ট্রা-অর্থডক্স) ইহুদিদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবের একটি রাস্তা অবরোধ করেছে।
অন্যদিকে নূহ আল-শাগনোবি, গাজার একজন ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স কর্মী। যিনি এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করেননি, যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কি আবারো জীবনের ঝুঁকি নিবেন, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কারো জীবন বাঁচাতে?
দার আল-আরকাম স্কুলে ভাইরাল হওয়া এক উদ্ধার অভিযানে, তিনি এবং তাঁর দল একটি ইসরায়েলি বিমান হামলার পরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া একজন মানুষের পাশে থেকে গিয়েছিলেন। যদিও তাদের সতর্ক করা হয়েছিল যে, দ্বিতীয় একটি ক্ষেপণাস্ত্র আসতে পারে।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এমন হাজার হাজার ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কেউ সেগুলো ভিডিও করেনি।” নূহ বলেন, তিনি সেদিন বেঁচে ফিরবেন বলে আশা করেননি, কিন্তু যতদিন মানুষের তাদের প্রয়োজন, ততদিন তারা সবকিছু ঝুঁকিতে ফেলতে প্রস্তুত থাকবেন।
বিশ্ববাসীর প্রতি হামাসের বার্তা:
গাজায় চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদে আগামীকাল ব্যাপক হরতাল, কর্মসূচি ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামি মুক্তিবাহিনী হামাস।
তারা আরো জানিয়েছে, যে লক্ষ্য ইসরায়েল আগেরবার আলোচনার মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি, তা যুদ্ধ ও অপরাধের মাধ্যমে চাপিয়ে দিতে পারবে না।
হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, দখলদারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই।