সুনামগঞ্জের-বিদায়ী-জেলা-প্রশাসকের-আবেগঘন-স্ট্যাটাসনিজস্ব প্রতিবেদক: ০৬.০১.২১বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক হিসেবে বদলি হয়েছেন গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করা মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।২০১৮ সালে ৯ আগস্টে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক পদে যোগ দান করেছিলেন তিনি। গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দায়িত্ব নবনিযুক্ত ডিসি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন। ৫ জানুয়ারি বিদায় নেন তিনি। বিদায়োর একদিন আগে সুনামগঞ্জ ফেসবুক পেজে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন আব্দুল আহাদ।তার এই স্ট্যাটাস সুনামগঞ্জবাসীর হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। কমেন্টবক্সে অনেকেই তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নতুন দায়িত্বের শুভকামনা জানিয়েছেন তারা।সদ্য বদলি হওয়া ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সেই স্ট্যাটাসের কিছু অংশ দেয়া গেল, প্রধানমন্ত্রীর আদেশে সুনামগঞ্জ জেলায় ২০১৮ সালের ৯ আগস্টে যোগদান করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, সরকারি দায়িত্বের বাইরে সুনামগঞ্জের প্রতি আত্মিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল আজ থেকে শুরু হল তার নতুন অধ্যায়। ভালো থেকো সুনামগঞ্জ, ভালো থেকো সুরমার জলরাশি, ভালো থেকো হাওরের সবুজ শ্যামলীমা ও নীলাভ জলরাশি। ভালো থেকো মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪টি স্বাধীনতা উপত্যকার বীর সন্তানগণ। ভালো থেকো জাদুকাটা, কুশিয়ারা, রক্তি, কালনি নদীর পানি। ভালো থাকবেন সুনামগঞ্জের আমার প্রাণপ্রিয় জনসাধারণ। যদি সম্ভব হয়, মনে রেখো আমিও ছিলাম সুনামগঞ্জেরই একজন এবং ভবিষ্যতে তার চেয়েও বেশি কিছু।’ আব্দুল আহাদ লেখেন, ‘স্বীকার করতে দ্বিধা নেই সুনামগঞ্জের হাওরের মাটিতে যেমন করে দ্রুত সোনালী ধান ফলে, যেমন করে শিখর গভীরে চলে যায়, তেমনি করে মাত্র ২ বছর ৫ মাসের পথ চলায় আমার হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করেছে সুনামগঞ্জের মাটি ও মানুষ। বড় কিছু করেছি কখনোই দাবি করি না। তবে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সততার সাথে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারে প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক হিসেবে পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসেবায় কিছু করার চেষ্টা করেছি। নিজ অবস্থানে জ্ঞানত বা ইচ্ছাকৃতভাবে কারো সামান্যতম ক্ষতির কারণ যাতে না হই সে বিষয়ে সচেষ্ট থেকেছি। 'মুজিববর্ষ' উপলক্ষে সরকার কর্তৃক নির্দেশিত প্রন্থায় সুনামগঞ্জবাসীর সেবার মানোন্নয়নে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার অম্লান স্মৃতিকে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জের মাধ্যমে বিশেষ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ৩৯০৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ নতুন ঘর প্রদান উদ্যোগ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছি।’ এরপর বিদায়ী জেলা প্রশাসক লেখেন, ‘আমার দাফতরিক কিংবা ব্যক্তিগত আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবার বিনীত অনুরোধ করছি। আমার সকল উদ্যোগ সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য কর্মকালে সাবেক সকল সহকর্মী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকগণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, সিনিয়র সহকারী কমিশনারবৃন্দ, সহকারী কমিশনার (ভূমি)বৃন্দ, সহকারী কমিশনারবৃন্দ, সকল পর্যায়ের/বিভাগের সহকর্মী / জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সহকর্মী ও সকল পেশাজীবি সংগঠনের সদস্যদের প্রতি হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিদায় সুনামগঞ্জ, বিদায় আমার প্রাণপ্রিয় সুনামগঞ্জবাসী।’।