বাপ দাদাদের ছেড়ে আসা দেশে - আমি মুসাফির বেশে (১ ভ্রমন কাহিনী)
বাপ দাদাদের ছেরে আসা দেশে - আমি মুসাফির বেশে (১)
------------------------------চৌধুরী হাফিজ আহমদ
প্রায় ৩ যুগ থেকে বিলেতে পাকিস্তানী দের সাথে আমার বসবাস , অনেকে অনেক বার বলেছে যেতে কয়েকবার উদ্যোগ নিয়ে ও যেতে পারিনি কাজে কর্মে ব্যস্ততা ঘিরে রাখে , কিন্তু এবারে আমাকে ভিসা সহ টিকিট দিয়ে এমন করে অনুরুধ করল না করার উপায় ই ছিল না , রবিউল আউয়াল মাসে সাজে পাকিস্তান মনের মত করে , চারিদিকে রাসুলুল্লাহ সঃ এর মহব্বতে এই মাস কে স্মরণ ও বরণ করে , অলিতে গলিতে বাজারে বন্দরে সরকারি বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে এই মাস পালিত হয় খূব মর্যাদা র সহিত , তাহাদের মতামত অনুযায়ী রাসুল সঃ না এলে দুনিয়া ই হতনা , যার কারনে এই দুনিয়া হল তাহার জন্ম মাস যদি খুশী না করি তা হলে মানব জিবন বৃথা , আসলে ও তাই এমন কি বিধর্মী রা পর্যন্ত রাসুল সঃ এর আগমনী নিয়ে উৎসব পালন করেছে , মহা পৌত্তলিক রা খুশির জোয়ারে ভেসে গোলাম দাসী আজাদ করেছে , মহা সম্মেলন করে মুহাম্মদ সঃ এর আগমনী বার্তা জানিয়েছে , নাসারা ইয়াহুদি রা উনার নিরাপত্তার ব্যবস্তা করেছে , তাই মুসলমান হয়ে আমাদের উচিত রাসুলুল্লাহ সঃ কে সকল ক্ষেত্রে অনুসরন করা , পাকিস্তানের সরকার মহা ধুম ধামে তাই এই মাসকে পালন করতে উৎসাহ যোগায় , আমাকে তাই এবারে মাওলানা তানভীর আহমদ মমতাজ সাহেব মোহাম্মাদ আলী সাহেব আমাকে নিয়ে যেতে তৎপর ছিলেন , আমার ও মনে মনে ছিল একবার দেখা উচিত পাকিস্তানের জমিন ও জনমানুষের অবস্তা , অবশ্য পাকিস্তানের ব্যাপারে আমি যে অবগত নই তা নয় অনেক অনেক গল্প শুনেছি নানা দাদা চাচা বাবার কাছে , আমার পরিবারের কয়েক ডজন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চাকুরী করেছেন অত্যন্ত দাপটের সাথে এক দাদা লাহোরে ছিলেন প্রশাসনিক কর্ম কর্তা , স্বাধীনতার ঘোষণার সাথে সাথেই পায়ে হেঁটে কোলকাতা হয়ে দেশে ফিরেছিলেন , আরেক নানা আর্মিতে ছিলেন তিনি আমাকে বলেছিলেন ভাই রে পাকিস্তান আমরাই গড়েছি , আমাদের নারা ছিল - হাত মে বিরি/মুহ মে পান/লাড় কে লেয়েঙ্গে পাকিস্তান । আজাদী আন্দোলনে বাঙ্গালী রা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে ইতিহাসেই প্রমাণ , আজাদী আন্দোলনে বাঙ্গালীদের বিরত্তের কাহিনী শুধু আমরাই জানিনা জানে বাচ্চা বাচ্চা সাচ্ছা সাচ্ছা পাকিস্তানীরা ও , পাকিস্তানের পতাকাতে ও রয়েছে বাঙ্গালীদের অবদান , বলতে গেলে পাকিস্তানের ইতিহাসের সাথে শুরু থেকেই বাঙ্গালীদের রক্ত শামিল রয়েছে , যতই পাকিস্তানী সুপার পাওয়ার হোক না কেন কিয়ামত পর্যন্ত বাঙ্গালীদের ভূলা সম্ভব নয় , আমি যাব বলে গুজরান ওয়ালা শহরের সুলতান পুরা মহল্লা সেজেছিল অপরুপ সাজে - একদিন আগে গেলাম আল্লামা ইকবাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেমে পেলাম আমাকে নিতে এসেছেন দল বেঁধে , তাহাদের অভ্যর্থনার অবস্তা দেখে তো আমি অবাক , আমি একদম সামান্য নগন্য একজনের জন্য এই আয়োজন ছিল অসামান্য , আলহামদুলিল্লাহ সকল ইজ্জতের মালিক আমার রব , আল্লাহর করমে আমি খুব ভাগ্যবান , এমন এক মহান মাহফিলে আমাকে যাবার তাওফিক দিয়েছেন তাই আনন্দ চিত্তে শুকরিয়া আদায় করছি , লাহোর থেকে প্রায় ২ ঘণ্টায় পৌঁছালাম গুজরান ওয়ালা শররের সুলতান পুরা মহল্লায় , গুজরান ওয়ালা নাম এই শরের এই কারনে যে এই রাসতা দিয়ে গিয়েছিলেন রণজিৎ সিখ নামে এক ব্যাক্তি যিনি হচ্ছেন শিখ মতবাদের অন্যতম উদ্যোগতা , আমি যদিও অনেক জেনেছি শিখ দের ব্যাপারে তবু আমার বুঝে আসেনি এই মতবাদ কে কেন ধর্ম বলে চালানো হচ্ছে , শিখ বলতে ভেদা বেদ বৈষম্য বিহীন সকল ক্ষেত্রে সমতা আনা , তৎকালীন সময়ে জাত পাত নিয়ে অনেক উৎপাত হত , হিন্দু দের এই জাত বৈষম্যের ফলাফলেই এসেছে শিখ মতবাদ , গুরুরা তখন যে সব শিস্য তৈরি করেছিলেন তাহারাই হচ্ছেন এখন এর মূল কেন্দ্র বিন্ধুতে , এই রনজিত শিখ সাহেব পাঞ্জাবে এক বিশাল মুরিদ গুষ্টি নিয়ে চলতেন , পাকিস্তান পাঞ্জাবের অধীনে এই এলাকা দিয়ে তিনি চলাচল করতেন বলেই এলাকার নাম হচ্ছে গুজরান ওয়ালা , এই এলাকায় এখন শিখ মতবাদের লোক আছে , তাহারা অত্র এলাকায় তাহাদের মত করেই চলছে , পাকিস্তানের আয়তন বিশাল প্রায় ৯২৫ হাজার বর্গ মাইল , অবশ্য সবজান্তা গুগলি তে দেখেছি ৮৮১.৯১৩ কিলোমিটার , জনসংখ্যা হচ্ছে আনুমানিক ২৩ বা ২৪ কোটি - বহু ভাষা - কিন্তু এর মধ্যে উর্দু ই প্রধান , সংসদীয় পদ্ধতিতে চলছে দেশ বর্তমান প্রধান মন্ত্রি হচ্ছেন জনাব ইমরান খান ,প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন আরিফ আলভী উনাদের নেতৃত্বে চলছে দেশ - পাকিস্তান এমন একটি দেশ যার রয়েছে বহুজাতিক চরিত্র - একদিকে আফগান অন্যদিকে চীন আরেক দিকে ইন্ডিয়া , যা দেখেছি আমি তাহাতে বলতে গেলে বলতেই হবে অ্যাটমিক ক্ষমতাধর না হলে পাকিস্তানের অবস্তা বা অস্তিত্ব ই থাকতনা এতো দিনে , জনগন প্রায় দিশেহারা - না আছে শৃঙ্খলা বা না আছে সু শাসন , যেমন ইচ্ছে তেমনি চলে , বর্তমান পাকিস্তান এবং আগের পাকিস্তান এত এত ব্যবধান যা না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না , আগেকার পাকিস্তানের কথা শুনেছি দেখিনি কিন্তু এখনকার পাকিস্তান কে আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি - পার্থক্য আকাশ এবং পাতাল সম , অর্থনৈতিক অবস্তা বেসামাল , দ্রব্য মুল্য আকাশ ছোঁয়া , মানুষের কাজ নাই খাদ্য নেই বাসস্তান নেই সুখ নাই শান্তি ও প্রায় উধাও , কিন্তু আবার এক শ্রেণী আছে তাহারা ই সর্বে সেরা সেই শ্রেণী হচ্ছে সামরিক বাহিনী , আর্মিদের অবস্তা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে - যদি থাকেন ফৌজি দের সাথে তা হলে আপনি সর্দার - নতুবা আপনি বেকার , ফৌজি দের হাতেই আসল ক্ষমতা এরাই চালায় সরকার কে , এদের আছে ব্যারাক আছে ব্যাংক ক্লিনিক ফ্যাক্টরি স্কুল ইত্যাদি , জনগন কে কুলুর বলদের মত ব্যবহার করেই চলছে ,বর্তমান সরকার কে এমন করে রাখছে যেন পুতুল নাচাচ্ছে , না পারছে হিলতে না পারছে দুলতে , যা ইচ্ছে তাই করিয়ে নিচ্ছে ফৌজি বাহিনী , এই সেই বাহিনী যাহারা অত্যাচার জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে বর্তমান বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে , বাংলাদেশের জনগন যখন এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে চাইল তখন ই নির্বিচারে হত্যা করা শুরু করল নিরীহ জনগন কে , ইন্ডিয়ার সহায়তায় অবশেষে বাংলাদেশ তাহাদের থেকে মুক্তি পেল , সেই যুদ্ধের ইতিহাস খুব করুন , আমার জন্মের পূর্বে কিন্তু জেনেছি গুরুজন থেকে সেই জুলুমের কথা , আমাদের পরিবার হারিয়েছে তাহাদের কয়জন সন্তান কে , এবারে সরেজমিনে দেখলাম নাহ ওরা শুধু বাঙ্গালীদের সাথেই জুলুমের আচরন করেনি সমানে করতেছে তাহাদের জনগুস্টির সাথে ও , ফৌজিদের কারনে আজকে সাধারন জনগন কথা বলতে পারছেনা নাই তাহাদের মৌলিক স্বাধীনতা , নাই বাক স্বাধীনতা , সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে খুলবে মুখ বন্ধ থাকবে তাহাদের সুখ ।