বালাগঞ্জে দুর্নীতিবাজ মাখন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ইউনিয়নবাসী

বালাগঞ্জে দুর্নীতিবাজ মাখন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ইউনিয়নবাসী

বাংলাভাষী ডেস্ক :

দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের নানা অভিযোগ তুলে বালাগঞ্জের পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মাখন মিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিয়নবাসী।
বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলেছেন, ‘মাখন মিয়া সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম চালিয়েছেন। হুমকি-ধমকি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ইউনিয়নে ত্রাসের রাজ্যত্ব কায়েম করেছিলেন। এখন পটপরিবর্তনের ফলে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। তাই, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় মো. ফয়সল আহমদ। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আওয়ামী ক্যাডার ও দুর্নীতিবাজরা আত্মগোপনে চলে গেছে অথবা কেউ কেউ দেশ থেকে পালিয়েছে। পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মাখন মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যে কোনো সময় তিনি দেশ থেকে পালাতে পারেন।’
ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ, ‘এতদিন সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান ও সাবেক এমপি হাবিবুর রহমানের ছত্রছায়ায় মাখন মিয়া নানা অন্যায় কাজ করলেও আমরা এলাকাবাসীর তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাইনি। তার বিরুদ্ধে টু শব্দ করলে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করতেন। গুন্ডা লেলিয়ে দিতেন এবং নিজে শাসাতেন।’
তারা জানান, মাখন চেয়ারম্যান নিজেকে উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহবায়ক এবং সর্ব ইউরোপীয় শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সহসভাপতি দাবি করতেন।
বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরে ফয়সর বলেন, ‘কৃষি মৌসুমে সার বীজ দেওয়ার কথা বলে দরিদ্র অসহায় ইলাচ মিয়ার এনআইডি কার্ড এর ফটোকপি নেন। পরবর্তীতে ওই এনআইডি দিয়ে ইলাচ মিয়ার নামে উপজেলায় সরকারী ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ বের করে চেয়ারম্যান তাঁর নিজের বাড়িতে স্থাপন করেন।’
এ রকম অহরহ অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার মেয়াদকালে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কচুয়ারাইল বাধে মাটিভরাটের জন্য তিন বার বরাদ্দ এনে একবারও কাজ করা হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১.৮ মেট্টিকটন গম বরাদ্দ ছিল। একই ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া কবরস্থানের মাটি ভরাটের কাজে দুর্নীতি করে লাখ টাকা আত্মসাত করেন। ডিপটিউবওয়েল স্থাপনের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, একইভাবে দুলা মিয়া মেম্বারের বাড়ির মাটি কাটার বরাদ্দ কর্তন করে চেয়ারম্যান নিজের ফিসারির পাড় নির্মাণ করেছেন। দুই নম্বর ওয়ার্ডের মকদ্দছ আলীর বাড়ির রাস্তা ৫ ঈঞ্চি সিসি ঢালাইর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি। একই ওয়ার্ডে মৃত সোনাফর আলীর বাড়ির রাস্তা সিসি ঢালাইয়ে অনিয়ম হয়েছে।’
ফয়সল তার বক্তব্যে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গোটা ইউনিয়নেও বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। বন্যা সহায়তার জনপ্রতি ৫০০০ টাকা বন্টনে অনিয়মের কথা এখন সবার মুখে মুখে। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের নামে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
প্রভাব বিস্তার ও মানুষকে হয়রানির উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় জড়ানো এবং ডিবি পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ফয়ছল আহমদ. মো. মনির হোসেন, আহসান উদ্দিন, রুনু মিয়া, আব্দুর রকিব, জুনেদ আহমদসহ কয়েকজনের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার এবং তার নিজস্ব লোকের মাধ্যমে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা নিয়েছেন। যার তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’
ইউনিয়নবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ফয়সল বলেন, ‘এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি সরকারি চাকরিজীবী শেখ হেলাল মিয়ার পরিবারের উত্তরাধিকারী সনদ সংগ্রহের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করে তা পাননি। এ বিষয়ে শেখ হেলাল বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।’
এভাবে একের পর এক হয়রানি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা চেয়ারম্যান মাখন মিয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে এলাকাবাসী মুখিয়ে আছেন বলে জানান তিনি। পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মাখন মিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মনির হোসাইন,শেখ ইসমাইল আলী, ইলাচ মিয়াসহ এলাকার লোকজন।