মাকে নিয়ে আমার প্রথম লেখা
ওলীউর রহমান
মাকে নিয়ে এর আগে আমি কখনো লিখিনি বা লিখার চেষ্টাও করিনি। আমার কাছে সবসময় মনে হয় মাকে নিয়ে আমি যতোই লিখি না কেনো? কম হয়ে যাবে! কারণ, আমি আমার মাকে এতোটা বেশী'ই পরিমাণে ভালোবাসি যা কোনোদিন বলে অথবা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
মা আসলে অতুলনীয়। মায়ের সাথে যেমন পৃথিবীর কোনো কিছু তুলনা করা যায় না। তেমনি মায়ের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ, মায়া-মমতা এগুলো কখনো ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। মা- মহান, মা- শ্রেষ্ঠ। এই পৃথিবীতে আপনার জন্য কেউ যদি সর্বোচ্চ পরিমাণে সেক্রিফাইস করে থাকে, তবে সে হচ্ছে আপনার মা। সন্তানের জন্য মায়ের চেয়ে বেশী সেক্রিফাইস আর কেউ করেনি।
আমরা আসলে সৌভাগ্যবান। আমরা মায়ের মতো এতো মহান একজন মানুষ জীবনে পেয়েছি বলে। আবার দূভাগাও বটে আমাদের অনেকেই আছে যারা সেই মহান মানুষটার সেক্রিফাইস, ভালোবাসা বুঝতে না পেরে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে।
আধুনিক যুগের সোনার ছেলেদের মাকে নিয়ে আরেকটা গুণ আছে। তারা মাকে ভালোবাসার জন্য বছরের একটা দিন নির্ধারণ করে রেখেছে। নাম দিয়েছে মাদার্স ডে। সেইদিন তারা মনপ্রাণ ভরে মাকে ভালোবেসে সবকিছু উজার করে ফেলবে।
আপনি যদি সুশিক্ষিত হয়ে থাকেন! তাহলে কী একবারও ভেবেছেন? যেই মা পেটে ধারণ করা থেকে নিয়ে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা রাত, প্রত্যেকটা মুহূর্ত নিজের মতো করে আপনাকে ভালোবেসে গেছে। সেই মাকে ভালোবাসার জন্য আপনি সারা বছরে মাত্র একটা দিন নির্দিষ্ট করে রেখেছেন?
এমনও দেখা যায়, মাদার্স ডে-তে যেই ছেলেটা মাকে নিয়ে কেক কেটেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড দিয়ে ক্যাপশন দিয়েছে, “হ্যাপি মাদার্স ডে, অনেক ভালোবাসি মা তোমায়” পরদিন সকাল বেলা খবরের কাগজে দেখা গেছে মায়ের সেই গুণধর ছেলেটা মাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি! এই তাহলে মাকে ভালোবাসার নমুনা, এটাই বুঝি মাদার্স ডে-র ফসল?
একটা কথা বলে রাখি; মা যেমন আমাকে, আপনাকে ভালোবাসার জন্য ক্যালেন্ডারে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা সময় লিখে রাখেননি। প্রত্যেকটা দিন নিজের মতো করে ভালোবেসে গেছেন। কাজেই মাকে ভালোবাসার জন্য আমার, আপনারও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা সময়ের প্রয়োজন যেনো না হয়। প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা রাত, প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমি, আপনি আমাদের মায়েদেরকে ভালোবেসে যাবো।
আমি আগেই বলেছি, পৃথিবীর সব মা-ই শ্রেষ্ঠ, সব মা-ই মহান। সুতরাং কোনোভাবে মাকে কখনো ছোট করে দেখা যাবে না। আমার মা ভালোনা, আমার মা খারাপ। অমুকের মা কতো ভালো। এইরকম কথা যেনো আমরা ভুলেও না বলি। মায়ের প্রতি সবসময়ই সর্বোচ্চ ভালোবাসা দেয়ার চেষ্টা করবো।
আমি আমার কথাই বলি; আমি যেদিন থেকে আমার মাকে, মায়ের ভালোবাসা, আদর, স্নেহকে একটু-আধটু উপলব্ধি করতে শিখেছি। সেদিন থেকেই আমি যখন আমার পৃথিবীকে ভাবি; তখন আমার কাছে মনে হয়, “আমার মা-ই আমার পৃথিবী।” মাকে ছাড়া আমি ভাবতেই গা শিউরে উঠে!
কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করে, আজকে আপনার একটি মাত্র চাওয়া পূরণ করা হবে, আপনি কী চান? আমি নির্দ্বিধায় বলবো, আমার মাকে। আবার যদি কেউ প্রশ্ন করে এমন একটা জিনিস যা আপনি কখনো হারাতে চাননা, সেক্ষেত্রে আপনি কোনটা বেঁচে নেবেন? সেটাতেও আমি আমার মাকে বেছে নেবো। কারণ আমার যতো টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি যত যা কিছু আছে সব চলে গেলেও কিচ্ছু যায় আসেনা। কিন্তু মা ছেড়ে যাবে এটা কখনো আমি মেনে নিতো পারবো না।
আমার কাছে সবসময় মনে হয়, মা আছে বলে শত শূন্যতার ভীড়েও আমি একটু প্রশান্তি খুঁজে পাই। কারণ আমার যখন খুব বেশি মন খারাপ হয় আমি তখন আমার মাকে ফোন করি, মায়ের সাথে কথা বলি, মায়ের নিশ্বাসের শব্দ শুনি, মাকে অনুভব করি, সাথে সাথে আমার মন ভালো হয়ে যায়। এইযে একটা শান্তি। এটা আমি একমাত্র আমার মায়ের থেকেই পাই।
শরীর খারাপ হলে সবাই বুঝতে পারে, কিন্তু মন খারাপ হলে কেউ বুঝতে পারেনা। কিন্তু আমার মা ঠিকই আমাকে বুঝেন। আমার যদি মন খারাপ হয় তিনি সাথে সাথে বুঝে ফেলেন। এবং আমাকে সান্ত্বনা দেন, আশ্বাস দেন।
জানেন, একটা বয়সের পর সব মানুষেরই আত্মায় মন-খারাপের রোগ দেখা যায়। চাইলেও সে রাতে ঘুমাতে পারেনা। মনে হয়, পৃথিবীর সকল বিষাদ তার দেহে ভর করেছে। নিদ্রা যাবে বলে বিছানায় যায়, কিন্তু চোখে ঘুম আসেনা। সারাক্ষণ একটা বিষন্নতার চাপ চোখে-মুখে লেগে থাকে। মানুষ হিসেবে আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। আমারও মন খারাপ হয়। প্রায় রাত্রি নির্ঘুম কেটে যায়। উৎফুল্লের বিষয় হলো, পড়ালেখার জন্য আমি আমার মায়ের থেকে দূরে থাকি। অন্য একটা শহরে। কিন্তু আমি যখন ছুটি কাটাতে বাড়িতে বেড়াতে যাই। যে কটা দিন বাড়িতে কাটাই, সেইসকল দিন আমি আমার মায়ের পাশেই ঘুমাই। কারণ আমি যতোই কষ্টে থাকিনা কেনো? যখন আমি আমার মায়ের পাশে ঘুমাই তখন আর আমার কোনো কষ্ট মনে থাকেনা। আমার সমস্ত মন জুড়ে এক প্রশান্তির হাওয়া বইতে থাকে। আমার মনে হয়, আমি পৃথিবীর একমাত্র সুখী ব্যাক্তি।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো, মা-ছেলের সম্পর্ক পৃথিবীর সকল সম্পর্কের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। মা-ছেলের ভালোবাসা পৃথিবীর সকল ভালোবাসাকে হার মানায়। আমার মাকে আমি এতোটা বেশীই ভালোবাসি যে, তা কখনো বলে বা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। অনেক সময় দেখি মানুষ ভালোবাসার পরিমাপ করে। বলে, কে কাকে কতোটা ভালোবাসে? আমি কী বলি জানেন, পৃথিবীর সকল ভালোবাসা পরিমাপ করা সম্ভব, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা কখনো পরিমাপ করা সম্ভব না।
আমি সবার প্রতি একটাই আরজ রাখবো, আমরা যেনো আমাদের মায়েদেরকে যথেষ্ট সম্মান করি, খেয়াল রাখি, তাদের যত্ন নেই। কখনো কোনো কারণে যেনো তাদের মনে কষ্ট না দেই।