রোটারির ৩৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে নারী ক্ষমতায়নের নতুন ইতিহাস গড়লেন সেলীনা আক্তার চৌধুরী

রোটারির ৩৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে নারী ক্ষমতায়নের নতুন ইতিহাস গড়লেন সেলীনা আক্তার চৌধুরী

সুবর্ণা হামিদ

পুরুষপ্রধান নেতৃত্বের দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময়ের ধারায় অবশেষে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন সেলীনা আক্তার চৌধুরী। রোটারি ক্লাব অব সিলেট মিডটাউনের ৩৭ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

২০২৫-২৬ রোটাবর্ষে ক্লাবের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। তাঁর এই নির্বাচন শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথে রোটারির একটি অগ্রণী মাইলফলক বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

রোটারিতে সেলীনা আক্তার চৌধুরীর এই সাফল্য শুধুমাত্র একটি পদপ্রাপ্তি নয়; এটি সময়, সমাজ ও নেতৃত্বে নারীর সমঅধিকারের এক প্রতীকী বিজয়। ক্লাবের সদস্যদের মতে, তাঁর নির্বাচন রোটারির ৩৭ বছরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

সেলীনা বলেন, ২০১৮ সালে আমি রোটারির সদস্য হই। শুরু থেকেই ক্লাবের নিয়মিত কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। আজ যখন সবাই আমাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছে, সত্যিই আমি গর্বিত ও কৃতজ্ঞ।

তিনি জানান, তার মেয়াদে নারীর শিক্ষা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং তরুণদের কর্মমুখী দক্ষতা বাড়ানোর দিকেই মূলত গুরুত্ব দেওয়া হবে।

সেলীনা আক্তার চৌধুরীর জন্ম সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার গনিপুর গ্রামে, এক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার পিতা মরহুম আব্দুল মোক্তাদীর চৌধুরী ছিলেন এলাকার একজন শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তি। আর মাতা আমেনা বেগম ছিলেন এক দৃঢ়চেতা, প্রজ্ঞাবান এবং মমতাময়ী নারী—যার আদর্শ আজও সেলীনার পথচলায় প্রেরণা হয়ে রয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সেলীনা একজন সফল নারী, যিনি শুধু সমাজসেবায় নয়, পরিবারেও সমানভাবে শ্রদ্ধেয়। তিনি প্রখ্যাত ব্যবসায়ী আবুল কালামের সহধর্মিণী এবং তিন সন্তানের গর্বিত জননী। সংসার, সমাজ ও নেতৃত্ব—সবখানেই তিনি দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।

তার বড় ছেলে 'এম্পেরর ট্রেড ওয়ার্ল্ড'-এর স্বত্বাধিকারী, দ্বিতীয় ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং ছোট ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

সেলীনা একজন উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন অনুমোদিত একজন প্রযোজক, অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘সিলেট ভয়েস’-এর প্রকাশক এবং জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য। পাশাপাশি তিনি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও সিলেট উইমেন্স জার্নালিস্ট ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত উপদেষ্টা হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।

সিলেট মিডটাউন রোটারি ক্লাবের সদস্যরা আশা প্রকাশ করেছেন, তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতা ক্লাবের কর্মকাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্লাব আরও কার্যকরভাবে এগিয়ে যাবে বলেও তারা বিশ্বাস করেন।